আলাহ তাআলা জ্ঞানের চর্চা, জ্ঞানের অনুশীলন দ্বারা মানব জাতির কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন। শুধু জ্ঞানই নয়, জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত সকল শাখার দিশারি হচ্ছে কুরআন।বস্তুজগতের জ্ঞানই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বিষয়ক বহু আলোচনা হয়েছে আল কুরআনে। ইসলামী পরিভাষায় ইলম ও হিকমত এ দুটি শব্দই জ্ঞানের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গভীরভাবে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, প্রকৃতি ও সামাজিক জ্ঞানের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর উলেখ করতে গিয়ে ‘হিকমত’ কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ‘ইলম’ শব্দটি প্রয়োগ খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। পবিত্র কুরআনের যত জায়গায় প্রকৃতি রাজ্যের এমন নৈসর্গিক ঘটনাবলীর দিক আলাহ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন, যেগুলোতে বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও অভিজ্ঞতা জড়িত রয়েছে। সে সকল বর্ণনায় ইলম শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। সুতরাং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বুঝাবার জন্যই আলাহ ইলম শব্দের প্রয়োগ পছন্দ করেছেন। 

আলাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করে তাঁকে এমন গুণে ভূষিত করলেন যা দ্বারা তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। আর এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা ইলম বা জ্ঞানের মাধ্যমেই সম্ভব হলো। আল-কুরআন তার অনুসারীদেরকে জ্ঞান শিক্ষা করার ক্ষেত্রে আলাহর অনুগ্রহ লাভ করার দুয়া শিখিয়ে দিয়েছে, 

বল হে আমার প্রতিপালক। আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর (সূরা ত্ব’হা ২০: ১১৪) 

আলাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন, 

তিনি যাকে ইচ্ছা বিজ্ঞানের জ্ঞান দান করেন। আর যে ব্যক্তিকে বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রদান করা হলো তাকে মহা সম্পদ দান করা হলো। (সূরা বাকারা ২: ২৬৯) 

আল-কুরআন আমাদেরকে যেমন জ্ঞান অর্জন করার আদেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছে, তেমনি অনুপ্রেরণা দিয়েছে জগৎ সমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করার প্রতি। কারণ প্রতিটা সৃষ্টির মাঝে আলাহর অলৌকিক কুদরত ও নিদর্শন রয়েছে। তাইতো বর্তমান বিজ্ঞানের বিস্ময়কর যুগে সঠিক বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শত শত বিজ্ঞানীগণ সেই মহান স্রষ্টার প্রতি ঈমান আনতে শুরু করেছে। কারণ আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীগণ আলাহর বিভিন্ন সৃষ্টির মাঝে সুদৃঢ়, সুক্ষ্য, সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছেন। পৃথিবীর আবর্তন ও তার পৃষ্ঠে সংঘটিত ঘটনাবলী, চন্দ্র-সূর্য ও তারকাসহ জগতের সর্বত্র শুধু বৈজ্ঞানিক জ্ঞানেরই সুষম বিন্যাস। তাই আলাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

তোমরা দেখ আসমান ও জমিনে কি রয়েছে? (সুরা ইউনুস ১০:১০১) 

আসমান ও পৃথিবীর রাজ্যে যা কিছু আলাহ সৃষ্টি করেছেন তা কি তারা দেখে না? (সূরা আরাফ ৭ঃ১৮৫) 

বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগ। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও তথ্যের ভিত্তিতে মহা বিশ্বের এ বিশালতা ও নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতি যদি দৃষ্টি দেয়া হয়, তবে আমাদের দৃষ্টি সীমানাকেই শুধু ক্লান্ত করবে না বরং আমাদের কল্পনাকেও অভিভূত করে দেবে। যার ইঙ্গিত আল কুরআন বহু আগেই ঘোষণা করেছেন, 

দয়াময় আলাহর সৃষ্টিতে কোন খুঁত দেখতে পাবে না, আবার তাকিয়ে দেখ, কোন ত্র“টি দেখতে পাও কি? এরপর বার বার দৃষ্টি ফিরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। (সূরা মুলক ৬৭: ৪) 

তাই বলতে পারি আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক গভীর। তবে বিজ্ঞানের তত্ত্ব লব্ধ জ্ঞান হতে হবে কুরআনি নির্দেশনা মোতাবেক। যেহেতু কুরআন হচ্ছে আলাহ প্রদত্ত ঐশী বাণী, যাতে নেই সন্দেহ, নেই কোন মিথ্যার অবকাশ। শত ভাগ সত্য ও সঠিক এবং কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত। আর বিজ্ঞান হলো মানুষের আহরিত জ্ঞান, তাই তা স্থান কাল পাত্রের ব্যবধানে পরিবর্তিত হয়, সন্দেহ মুক্ত নয় ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে থাকে বহুলাংশে, কারণ মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়।এ বিষয়ে ফ্রান্সের বিজ্ঞানী মরিচ বোকাইলি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন ‘আমরা দেখেছি, মহা বিশ্ব সম্পর্কে কুরআনের একটি আয়াতও এমন নয়, যা বৈজ্ঞানিক বিচারে সঠিক নয়।খানে বাইবেলে ভুলের পরিমাণ পর্বত সমান, সেখানে কুরআনের কোন আয়াতে আমি কোন ভুল খুঁজে পাইনি। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য সংবলিত আয়াতের সংখ্যা প্রচুর। আর এ সব বাণী আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে কীভাবে যে এতো বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে সে বিষয়টাই আমাকে বিস্মিত করেছে সবচাইতে বেশি।