নতুন আবিষ্কারক অমুসলিম বিজ্ঞানী ও আমাদের উদাহরণ ঐ দুই ব্যক্তির ন্যায় যারা কোন কারখানায় প্রবেশ করেছে। তাদের একজন এমতাবস্থায় কারখানায় প্রবেশ করেছে যে, তার কাছে রয়েছে উক্ত কারখানার মালিকের নির্দেশাবলী যাকে ক্যাটালগ বলা হয়। উক্ত কারখানায় প্রবেশকারী অপর ব্যক্তি তার কাছে কারখানা মালিকের নির্দেশাবলী নেই। সে সে কারখানায় ঘুরছে, চিন্তা ভাবনা করছে। সে একটি বোতাম দেখতে পেলো। তারপর সেই বোতামটি টিপে দেখল যে এই বোতামের কি কাজ রয়েছে। তারপর দেখল এই চাকা কি করে। তার কাছে এমনভাবে প্রকাশ পেলো যে এই বোতাম দিয়ে আলো জলে। ঐ বোতাম দিয়ে দরজা খোলে। এই যন্ত্রের এই কাজ, ঐ যন্ত্র দিয়ে এই জিনিস তৈয়ার হয়, তার বৈশিষ্ট্য এমন স্বাদ এমন, এমন ভাবে সে এই কারখানার বিভিন্ন তথ্য আবিষ্কার করতে শুরু করল। যখনই সে বলে আমি আবিষ্কার করেছি যে এই বোতামের এই উপকার। তখনই যার কাছে ক্যাটালগ রয়েছে সে তা বের করে বলে এটা তো-ক্যাটালগে আছে। 

এই বিশ্বজগৎ আলাহর সৃষ্টি এক অভূতপূর্ব অলৌকিক কারখানা। আর পবিত্র কুরআন হচ্ছে সেই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনাবলী বা ক্যাটালগ যাতে বিশ্বজগতের সকল তথ্য, সর্বকালের প্রয়োজন ও নির্ভুল বিধানসহ মানুষের কল্পনায় উদ্ভব হতে পারে এমন সব কিছুই এ গ্রন্থে রয়েছে। আলাহ তাআলা বলেন, 

এই কিতাবে আমি কোন কিছু লিখতে বাদ দেই নি (সুরা আনআম ৬ঃ৩৮) 

অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত সমস্ত ইউরোপ যখন অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন মুসলিমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যেমন জ্যোতি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ভূগোল শাস্ত্রে কুরআন মাজীদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন যা আধুনিক বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। 

তবে প্রশ্ন দাঁড়ায়, মুসলিমদের কাছে জ্ঞানের ভাণ্ডার কুরআনের মত মহা গ্রন্থ থাকা সত্ত্বেও কেন তারা বর্তমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে? আর কাফের মুশরিক ও নাস্তিকরা কেন, কি ভাবে বিস্ময়কর নতুন আবিষ্কারের অগ্রগতিতে উন্নতি সাধন করেছে? 

আলাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, 

অনতিবিলম্বে আমি আমার নিদর্শন তাদেরকে দেখিয়ে দিব, বিশ্ব জগতে ও তাদের নফ্সের ভিতরে যাতে তাদের কাছে ফুটে উঠে যে, ইহা সত্য। (সূরা ফুস্সিলাত-৫৩) 

যেহেতু তারা সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করেনি, রাসূলগণকে অস্বীকার করেছে, কুবআন মিথ্যা মনে করেছে। তাই মহাজ্ঞানী আলাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে জ্ঞান দিয়েছেন, শক্তি প্রদান করেছেন সুযোগ দিয়েছেন, সামর্থ্য জুগিয়েছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন, তাই তারা সক্ষম হয়েছে, আধুনিক আশ্চর্যজনক অলৌকিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এতো উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করতে। আর এটা এ জন্য যে যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় ইহা সত্য। তাইতো বর্তমান বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারের যুগে সঠিক বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, বৈচিত্রময় মহা বিশ্বের এ বিশালতা ও নিয়ম-শৃঙ্খলার একজন পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক রয়েছে। 

১১ই আগস্ট ১৯৯৯ ইং একটি সূর্য গ্রহণ হবে, যা কর্ণওয়ালে পুরোপুরি দৃষ্টিগোচর হবে-এটা শুধু একটি অনুমান ভবিষ্যৎ বাণী নয়, বরং মহাশূন্যবিদরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন যে, সৌরজগতের বর্তমান পরিভ্রমণ বিধি অনুযায়ী গ্রহণ সংঘটিত হওয়া আবশ্যক। যখন আমরা আকাশের দিকে তাকাই তখন অসংখ্য তারকাকে একটি ব্যবস্থার অধীন বিন্যাস দেখে অবাক হয়ে যাই। বহু যুগ পূর্ব হতে সীমাহীন মহাশূন্যে যে সমস্ত বিরাট বিরাট গোলক ঝুলে রয়েছে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট রাস্তায় পরিভ্রমণ করে চলেছে। তারা এত বাঁধা ধরা নিয়মে আপন কক্ষের উপর আবর্তিত হচ্ছে যে, তা কখন কোন দিকে যাবে, কোথায় অবস্থান করবে তা বহু শতাব্দী পূর্বেও সঠিকভাবে অনুমান করা যায়। পানির একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোটা থেকে আরম্ভ করে সীমাহীন মহাশূন্যের দূরদূরান্তের গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সর্বত্রই একটি অতুলনীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা বিদ্যমান। এদের কাজ কর্মের মধ্যে এই পরিমাণ পূর্বাপর সামঞ্জস্য রয়েছে যে, আমরা এর ভিত্তিতে অনায়াসে তাদের বাঁধা ধরা একটি বিধি প্রদান করতে পারি। 

আমি একজন আমেরিকান পদার্থ বিজ্ঞানী জর্জ আর্ল ডেউস এর উক্তি তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেছেন,

‘যদি সৃষ্টি জগৎ নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে তার মধ্যে সৃষ্টিকর্তার গুণাবলি রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা মানতে বাধ্য যে, স্বয়ং সৃষ্টিজগৎই আলাহ, এভাবে যদিও আমরা আলাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করছি কিন্তু এই আলাহ এমন বিরল ধরনের যে, তিনি একই সময়ে যেমন সৃষ্টিকর্তা তেমন জড় উপাদানও। আমি এ ধরনের একটি অলীক ধারণা পোষণ করার চাইতে এমন এক আলাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনকে শ্রেয় মনে করি, যিনি এ জড়জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি স্বয়ং এ জগতের কোন অংশ নন, বরং এর শাসক, ব্যবস্থাপক এবং পরিচালক। 

আমরা একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদের সাথে এক নাস্তিকের বিতর্কসভা বর্ণনা করছি। এক বিরাট জনসমাবেশে উক্ত নাস্তিকের সাথে তার বিতর্কের প্রোগ্রাম ঠিক হলো। সময় মত সে নাস্তিক সমাবেশে উপস্থিত হলো। কিন্তু উক্ত ইসলামী চিন্তাবিদ অনেক দেরিতে উপস্থিত হলেন। নাস্তিক ভদ্রলোক বলল, এত দেরি করে কেন আসলেন? আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। উত্তরে তিনি বললেন, আমার আসার পথে ছিল একটি নদী। পারাপারের উপায় ছিল না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ কি দেখলাম! আমার সম্মুখেই একটা বৃক্ষ গজাচ্ছে। এ বৃক্ষটা অল্প সময়েই বড় হয়ে গেল। অতঃপর আসল একটা কুড়াল। এই কুড়াল গাছটিকে কেটে ফেলল। তার পরে দেখলাম আসল করাত। করাত গাছটিকে চিঁড়ে তক্তা বানিয়ে ফেলল। অতঃপর পেরেক হাতুড়ি ইত্যাদি এসে গেল। আর তৈরী হয়ে গেল নৌকা। সে নৌকাটি আমার সম্মুখে চলে আসল এবং সে নৌকা দিয়েই আমি পার হয়ে আসলাম। এতে একটু দেরি হয়ে গেল। নাস্তিক চিৎকার করে বলে উঠল, সাহেব, আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন। এতগুলো কাজ কীভাবে নিজে নিজে হয়ে গেল? চিন্তাবিদ বললেন, এটাই হচ্ছে আপনার বিতর্ক সভার উত্তর। আপনি কীভাবে চিন্তা করতে পারলেন যে, এই বিশাল সৃষ্টি জগতে গ্রহ, নক্ষত্র, আকাশ-পৃথিবী, আলো বাতাস, গাছ-পালা, মানুষ-পশু-পাখি, অসংখ্য জীবজন্তু এসব কিছু নিজে নিজে তৈরী হয়ে গেল? উত্তর শুনে নাস্তিক হতবাক হয়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করল এর পিছনে একজন শক্তিশালী সুনিপুণ কারিগর অবশ্যই আছেন। আর তিনিই হচ্ছেন সর্বশক্তিমান আলাহ এ জগতের সৃষ্টিকর্তা ও তার একমাত্র মালিক।হয়তো কোন মানুষের হৃদয়ে এমন প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে যে, তাহলে কেন সকল বিজ্ঞানীগণ আলাহর প্রতি বিশ্বাসী হচ্ছে না? সত্যিকার অর্থে, যদি তারা এই মহা বিশ্বে আলাহর নিদর্শন দেখে থাকে? 

তাদের সম্পর্কে আলাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

 অতঃপর তাদেরকে উপদেশ দেয়ার পর তারা যখন উপদেশ ভুলে গেল, তখন আমি তাদের সামনে সব কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম, এমন কি যখন তাদেরকে প্রদত্ত বিষয়াদির জন্যে তারা খুব গর্বিত, আনন্দিত ও উলসিত হয় তখন আমি আকস্মিক তাদেরকে পাকড়াও করি। আর তখন তারা নিরাশ হয়ে যায়। অতপর জালিমদের মূল শিকড় কেটে ফেলা হয়। সমস্ত প্রশংসা আলাহর জন্য যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা। (সূরা আনআম ৪৪-৪৫)