পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আলাহ তা‘আলা বলেন: 

এই কিতাবের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই (সূরা বাকারা ২ঃ২) 

মহা পরাক্রম শালী মহা জ্ঞানী আলাহর পক্ষ থেকে এই কিতাব অবতীর্ণ গ্রন্থ। (সূরা গাফের ৪০:২) 

তারা কি আল কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? এটা যদি আলাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরীত্য দেখতে পেত। (সূরা নিছা ৪ঃ৮২) 

রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, 

আলাহর কিতাব যার মধ্যে তোমাদের পূর্ব পুরুষের সংবাদ রয়েছে, তোমাদের পরবর্তী সব কিছুর সংবাদ রয়েছে। তোমাদের মাঝে বিচারের নিয়মনীতি তাতে রয়েছে। এটি সুদৃঢ়, দুর্বল নয়। ক্ষমতার বলে যে এটাকে ছেড়ে দেয়, আলাহ তাকে ধ্বংস করেন । কুরআন ছাড়া অন্য কোন পথে যে হেদায়েত অনুসন্ধানকরে, আলাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেন। কুরআন হলো আলাহর শক্ত রশি। এই কুরআন বিজ্ঞানময় এবং সরল সঠিক পথ, এর মাধ্যমে হৃদয়ের বক্রতা আসবে না, ভাষার মিশ্রণ হবে না। এর থেকে আলেম ও বিজ্ঞানীগণ পরিতৃপ্ত হবে না বরং চাহিদা বাড়তে থাকবে। দ্বন্দ্বের উদ্ভব হবে না এবং এর অলৌকিকতা শেষ হবে না।(তিরমিজি শরীফ) 

এই সেই কুরআন যা শ্রেষ্ঠ নবীর চিরন্তন মু’জিযা হিসাবে নাজিল হয়েছে। যার বর্ণনার রয়েছে বিশেষ নৈপুণ্য, অল্প শব্দে বিশদ বর্ণনা, অপরূপ প্রকাশ ভঙ্গি, ভাবের গাম্ভির্য, যুক্তির দৃঢ়তা, তথ্যের বিশুদ্ধতা, সাবলীল ও চিত্তাকর্ষক গাঁথুনি। তাতে আরও রয়েছে মানব জীবনের প্রত্যেক অধ্যায়ের পরিপূর্ণ ও নির্ভুল আলোচনা। 

আলাহ তা‘আলা বলেন, 

এই কুরআন আলাহ ব্যতীত অপর কারো রচনা নয়, পক্ষান্তরে এটি পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সমর্থন ও বিধান সমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। সন্দেহ নেই ইহা রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। (সূরা ইউনুস ১০: ৩৭)

এই কুরআন সর্ব যুগের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এই চ্যালেঞ্জ শুধু আরবী সাহিত্য ও ভাষাগত নয় বরং মানব জীবন পরিচালনা সহ সব দিক দিয়ে। কুরআনী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য কাফের মুশরেকরা সার্বিক চেষ্টা চালিয়েছে। পরিশেষে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে এটা কোন মানুষের রচিত বাণী হতে পারে না। 

আল-কুরআনের এ সব তথ্য যা আসমান, জমিন, সাগর, জন্তু, তরুলতা ও মানুষ সম্পর্কে প্রদান করা হয়েছে, তা আজ আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, হিন্দ ইউরোপ ও অষ্ট্রেলিয়ার বৈজ্ঞানিকগণ বের করছেন। তারাও এর সাক্ষ্য প্রদান করছেন যে, কুরআন মহান আলাহ বাণী এবং তার পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ করা হয়েছে। আলাহ তা’আলা বলেন, 

বলুন একে তিনি অবতীর্ণ করেছেন যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের গোপন রহস্য অবগত আছেন। (সূরা ফুরকান ৬) 

এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, এই কালাম স্বয়ং সাক্ষ্য দেয় যে, এর নাজিলকারী আলাহ তা’আলা সেই পবিত্র সত্তা, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোপন রহস্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এ কারণেই তিনি কুরআনকে এক অলৌকিক কালাম করেছেন এবং বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, যদি তোমরা একে আলাহর কালাম বলে স্বীকার না করে কোন মানুষের কালাম মনে কর, তবে তোমরা এর অনুরূপ কালাম বেশী না হলেও একটি সুরা বরং একটি আয়াতই রচনা করে দেখাও। আরবের বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী লোকদের জন্যে এই চ্যালেঞ্জের জওয়াব দেয়া মোটেই কঠিন ছিল না, কিন্তু এতদসত্বেও তারা পশ্চাদপথ অবলম্বন করেছে, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কেউ সামনে অগ্রসর হয়নি, কেউ সাহস করেনি কুরআনের অনুরূপ অন্য একটি আয়াত রচনা করার। অথচ তারা রসুলুলাহ সা. এর বিরোধিতায় নিজদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও জীবন পর্যন্ত বিসর্জন করতে কুণ্ঠা বোধ করত না। কিন্তু কুরআনের অনুরূপ একটি সুরা লিখে আনার মত জটিতে তারা সফল হল না। এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, কুরআন কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয়। নতুবা অন্য মানুষও এরূপ কালাম রচনা করতে পারত। এটা সর্বজ্ঞ আলাহ তাআলার কালাম, ভাষা সাহিত্য ছাড়াও এর অর্থ সম্ভার ও বিষয়বস্তুর মধ্যে এমন জ্ঞান ও উপাদান নিহিত রয়েছে, যা একমাত্র প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিষয়ে জ্ঞাত সত্তার পক্ষ থেকেই সম্ভব। 

শেখ জিন্দানি বলেন,

 যতবার প্রফেসর আর্মষ্ট্রং বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আমরা ততবার তার প্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াত উপস্থাপন করেছি, যার সাথে তিনি একমত ছিলেন। অতঃপর আমরা তাকে বললাম,আপনি নিজে আধুনিক জ্যোতি-শাস্ত্রের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেছেন, আবার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন রকেট, মহাশূন্য যান ইত্যাদির আবিষ্কারও প্রত্যক্ষ করেছেন। আপনি এটাও দেখেছেন যে, একই ঘটনা কুরআনে বিবৃত হয়ে আছে ১৪০০ শত বৎসর পূর্ব থেকেই। সুতরাং কুরআন ও বিজ্ঞানের ব্যাপারে আপনার কি ধারণা? 

উত্তরে তিনি বলেন, এ আলোচনার সূচনা থেকেই আমি আপনাদের পক্ষ থেকে প্রশ্নটি নিয়ে ভাবছিলাম এবং এটা আমাকে প্রভাবিত করেছে যে, আল-কুরআনের তথ্যের সাথে আধুনিক জ্যোতিশাস্ত্রের অসাধারণভাবে সামঞ্জস্য রয়েছে। কি অবাক লাগে উভয়ের মধ্যে কোন গরমিল নেই, নেই কোন সংঘর্ষ। কত চমৎকার মিল এ প্রাচীন গ্রন্থ ও আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে। 

এই বলে প্রফেসর আর্মষ্ট্রং অকপটে বলে উঠলেন ১৪০০ শত বৎসর পূর্বের প্রাচীন পরিস্থিতির সম্পূর্ণ উদ্ধার করার যোগ্যতা আমার নেই। তবে আমি যা দেখেছি তাহলো, আল-কুরআনের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকুক বা না থাকুক, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু পর্যবেক্ষণের সৌভাগ্য নসিব হয়েছে, তা দিয়ে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিঃসন্দেহে ইহা মানবীয় জ্ঞানের অনেক ঊর্ধ্বের গ্রন্থ। এ পর্যায়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিতে আমি সম্পূর্ণ অক্ষম। আপনারা আমার কাছ থেকে উত্তরটি যেভাবে চেয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে জবাবটি না দিতে পারলেও আমি অনেক কিছু বলে ফেলেছি। যেহেতু একজন বিজ্ঞানী হিসাবে আমার কাজ হলো কোন প্রশ্নের জবাবের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকা। আমি মনে করছি, এখানেই থেমে যাওয়া ভাল। তবে এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি গভীর ভাবনার বিষয়, যখন বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কার ছিল না, তখন কীভাবে নিরক্ষর মুহাম্মদ সা. এ অলৌকিক জ্ঞান প্রচার করলেন? কোত্থেকে তিনি জ্ঞান লাভ করলেন? সমগ্র বিজ্ঞান আজ যে জ্ঞানের কাছে অবনত মস্তক। নিশ্চিত এটা কোন মানবীয় জ্ঞান নয়; বরং ওহির জ্ঞান এবং এক মহাশক্তি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান। আর সে শক্তি হলেন তামাম জাহানের মালিক আলাহ তাআলা। এই বলে তিনি বিশ্বাস করলেন, আলাহ তা‘আলাকে এবং তার বন্ধু মুহাম্মদ সা.-কে, আর বিশ্বাস করলেন বিজ্ঞানের ভাণ্ডার হিসাবে মহা গ্রন্থ আল কুরআনকে। অতঃপর তিনি মন্তব্য করেন, যুগে যুগে বিজ্ঞানীদের জন্য জ্ঞান আহরণের এক মহা উৎস হলো আল কুরআন। তাতে রয়েছে বহু অজানা ভাণ্ডার। আলাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

‘সেই আলাহ অভিজ্ঞ দৃশ্য ও অদৃশ্যের সকল বিষয়ের, আর তিনি দয়াশীল ও করুণাময়। (সূরা হাশর-২২) 

তিনি আরো মন্তব্য করেন, একমাত্র আলাহ পাকই জানেন, আসমান ও জমিনের সকল প্রকৃত গোপন তথ্য। 

শেখ জিন্দানী বলেন,

আমরা বিজ্ঞানীদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে এমন একটি যুগের সন্ধান লাভ করেছি, যেখানে ধর্ম ও বিজ্ঞান আলিঙ্গন করতে পারে এবং উভয়ই সত্যের পরাকাষ্ঠা হতে পারে। সুতরাং আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে কোন অসংগতি নেই এবং থাকতেও পারে না। বুদ্ধিজীবীরা শতাব্দী ব্যাপী গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, স্বর্গীয় জ্ঞান ও মানবীয় বিজ্ঞানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদি তারা বলে আমরা মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছি, সেটাও আল-কুরআনে বহু পূর্বেই উলেখ করা হয়েছে। যেমন আলাহ তাআলা বলেন, 

অর্থাৎ পরম পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। (বনী ইসরাঈল :১) 

আধুনিক বিজ্ঞান আজ মহা গ্রন্থ আল-কুরআনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। কী ভূতত্ত্ব বিদ্যা, কী ইতিহাস, কী মহাকাশ আবিষ্কার সব ক্ষেত্রেই রয়েছে কুরআনের সঙ্গে বিজ্ঞানের মিল। চন্দ্র বিজয়ী বিজ্ঞানী নীল আর্মষ্ট্রংসহ অসংখ্য বিজ্ঞানীর কণ্ঠ থেকে তাই আজ ধ্বনিত হচ্ছে।