মনে করেন আপনি বাসার বাইরে বের হলেন। আপনার সাথে এলাকার পরিচিত একজন মুরুব্বির দেখা হলো। আপনি শুরুতে তাকে দেখে কী করবেন? সালাম দেবেন তো, তাই না? কীভাবে দেবেন?

স্লামালেকুম?

না

স্লামালাইকুম?

না

আস-সামালাইকুম?

নাকি

সালাম, আঙ্কেল?

ইসলামের প্রধান ও প্রথম অভিবাদন হচ্ছে সালাম। এটি একটি দোয়া। সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষ অনেক ভুল করে।সালামের এ ভুলগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি বলে মত দেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। সালামের উচ্চারণে যদি ভুল হয় তবে এটির অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। ভুল উচ্চারণে সালাম দিয়ে সওয়াব অর্জনের বিপরীতে আমাদের গুনাহও হতে পারে।
বিশুদ্ধ উচ্চারণের সালাম তাহলে কীভাবে দিতে হবে?

হাদিসে কী বলা হয়েছে?

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন এক মজলিসে ছিলেন। সে বললো, আসসালামু আলাইকুম। রাসূল (সাঃ) বলেন, দশটি নেকী। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি ঐ পথে যেতে যেতে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। রাসূল (সাঃ) বলেন, বিশ নেকী। আরেক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যেতে যেতে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ। রাসূল (সাঃ) বলেন, তিরিশ নেকী। অতঃপর এক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলো, কিন্তু সালাম দিলো না। রাসূল (সাঃ) বলেন, হয়তো তোমাদের সাথী (সালামের মর্যাদা) বিস্তৃত হয়েছে। তোমাদের কেউ মজলিসে এসে পৌছলে যেন সালাম দেয়। তারপর মজলিসে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে সে বসবে। আবার সে যখন চলে যাবে তখনও যেন সালাম দেয়। কেননা পরের সালাম পূর্বের সালামের চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ নয়। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, আবু দাউদ)

আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে উত্তম ব্যক্তি যে প্রথমে সালাম দেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।
সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।
সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। তাই নিম্ন স্বরে বা মনে মনে সালাম দেওয়ার অভ্যাস পরিহারযোগ্য।
বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।
আমাদের সমাজে প্রচলন আছে, খাওয়ার সময় সালাম দিতে হয় না। এ কাজটি শুদ্ধ নয়। খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া জায়েজ, আবার সালামের জবাব দেওয়াও জায়েজ। কারণ, খাওয়ার সময় অন্য সব কথা বলা হচ্ছে। সব কথা বলা জায়েজ রয়েছে, তাহলে সালাম দেওয়া কেন নিষেধ থাকবে।
সালাম দিতে গিয়ে অনেককেই নিচের দিকে মাথা নোয়াতে বা ঝুঁকাতে দেখা যায়। এটি করা যাবে না। সালাম দিতে হবে মুখে সুস্পষ্ট উচ্চারণে উচ্চ আওয়াজে। এটি সালাম দেওয়ার অন্যতম আদব।
কখনো কখনো অপছন্দের মানুষ সালাম দিলে ব্যক্তি তার উত্তর প্রদান করে না। অথচ অপছন্দনীয় ব্যক্তির সালামের উত্তর দেওয়াও ওয়াজিব।
কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।
পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।
কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম… বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম… বলেছেন। এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।
সালামের মাধ্যমে মুসলিম থেকে মুসলিমে ছড়িয়ে যাক সম্প্রীতির বন্ধন।