আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগের জন্য অনেক বার্তাবাহক বা ম্যাসেজিং অ্যাপের উদ্ভব ঘটেছে। এতসব অ্যাপের ভিড়ে হোয়াটসঅ্যাপ না কি টেলিগ্রাম, কোনটি ব্যবহার করবো?

হোয়াটসঅ্যাপ নাকি টেলিগ্রাম, কোনটি অধিক ভালো, কোনটিতে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা অধিক বেশি, কোনটি ব্যবহার অধিক সুবিধাজনক তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহল আর দ্বিধা দ্বন্দ্বের যেন সীমা নেই।এই অ্যাপ দুইটির পার্থক্য খুঁজে বের করা খুবই দুষ্কর।

প্রথমে আমরা এই দুইটি অ্যাপের সাথে পরিচিত হই:-

আমাদের চেনা পরিচিত অ্যাপ "হোয়াটসঅ্যাপ "। ফেসবুক, মেসেঞ্জারের পর এই অ্যাপটি আমাদের কাছে অধিক পরিচিত। এটিকেই প্রথমের থেকে সবচেয়ে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত অ্যাপ বলে গণ্য করা হয়।হোয়াটসঅ্যাপের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে।

অপরদিকে,হোয়াটসঅ্যাপ আমরা মোটামুটি অনেকেই ব্যবহার করলেও, টেলিগ্রাম আমাদের অনেকের কাছেই নতুন। নিকোলাই এবং পাভেল দুরভ নামে ২ ভাই ২০১৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এখনও পর্যন্ত ২০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী এই অ্যাপটি ইনস্টল এবং ব্যবহার করেছেন। এর তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা পদ্ধতিও দারুণ। আপনি চাইলে এক সেকেন্ডে ৩০ টির কাছাকাছি মেসেজ পাঠাতে পারবেন টেলিগ্রামে।
হোয়াটসঅ্যাপ না কি টেলিগ্রাম একই জাতীয় অ্যাপ হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে যে যে পার্থক্য দেখা যায় তা হলোঃ-
১. টেলিগ্রামের ক্ষেত্রে 'Reliable end to end encryption' আছে, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপে শুধুমাত্র 'End to end encryption' পরিলক্ষিত হয়, যার ফলে হোয়াটসঅ্যাপে স্পাই ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।
২. টেলিগ্রামে আপনি যদি একটা গ্রুপ তৈরি করেন, তবে সেখানে প্রায় ২০০,০০০ জন সদস্য যুক্ত করতে পারবেন। কিন্তু ওয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে এটি মাত্র ২৫৬ তে সীমাবদ্ধ।
৩. সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার দিক থেকে ওয়াটসঅ্যাপ থেকে টেলিগ্রাম উত্তম। টেলিগ্রামে আপনি খুব সহজেই সব মেসেজের ব্যাকআপ পাবেন, যেটি ওয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে সবসময় পাওয়া কিছুটা কঠিন।
৪. বড় সাইজের ফাইলগুলো হোয়াটসঅ্যাপে সাপোর্ট করে না। এখানে আপনি সর্বোচ্চ ১.৫ জিবি পরিমান ফাইল প্রেরণ করতে পারবেন, যেখানে টেলিগ্রামে এমন কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই।
৫.টেলিগ্রামে আপনি আইপি এড্রেস গোপন করে রাখতে পারবেন, যা হোয়াটসঅ্যাপে সম্ভব না।
৬.টেলিগ্রামে মাল্টি-ডিভাইস সাপোর্টের সুবিধা রয়েছে। এর ফলে যে কেউ একাধিক ডিভাইসে নিজের একমাত্র টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি অ্যাকসেস করতে পারেন। তাছাড়া এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে গেলেও টেলিগ্রামের চ্যাটগুলি সংরক্ষিত থাকে। আবার টেলিগ্রাম ওয়েব ফিচারের মাধ্যমে ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও একজন নিজের কম্পিউটারে মেসেজিং চালিয়ে যেতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপেও খুব তাড়াতাড়ি এই সুবিধাগুলি উপলব্ধ হতে পারে
৭.সম্প্রতি ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটঅ্যাপ তাদের পেমেন্ট পরিষেবা ভারতে রোল আউট করেছে। এই ফিচারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ইউপিআই-নির্ভর ট্রানজাকশনের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে অর্থের আদান-প্রদান করতে পারবেন। কয়েকদিন আগেই ন্যাশনাল পেমেন্টস্ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে। টেলিগ্রামে এখনো পেমেন্টের সুবিধা উপলব্ধ নয়।

সর্বশেষে, প্রতিটি অ্যাপ এরই ভালো।হোয়াটসঅ্যাপ তুলনামূলক ভাবে ইউজার ফ্রেন্ডলি হলেও টেলিগ্রামের সুযোগে সুবিধা এবং নিরাপত্তা হোয়াটসঅ্যাপের তুলনার অনেকাংশেই ভালো। তবে ফিচার কিংবা সুযোগসুবিধা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলে, আপনার যেটি ব্যবহার করা সহজ এবং সুবিধাজনক মনে হবে সেটি ব্যবহার করাই উত্তম!